Long Date & Time

টলিউডের বাংলা কমার্শিয়াল ছবির রূপকার অঞ্জন চৌধুরী

মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যেন খা খা করছিল, তখন সবেমাত্র প্রসেনজিৎ, তাপস পাল, চিরঞ্জিত, ধীরে ধীরে চলচিত্র জগতে আসছেন। কিন্তু মানুষের মন জয় করার মতন ছবি সেভাবে তখন তৈরি হচ্ছিল না। কিন্তু ছবি যে একদমই হচ্ছিল না তা নয়, ভালো ভালো ছবি হচ্ছিল, কিন্তু সব ধরনের দর্শকদের জন্য যে বাণিজ্যিক প্রধান ছবি সেভাবে চোখে পড়ছিল না। সালটা ১৯৮৪, “অঞ্জন চৌধুরি” নামে এক পরিচালক এর আবির্ভাব হল, তার ছবি “শত্রু” পাল্টে দিল বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সব  হিসাব নিকাশ। ছেলে বুড়ো সকল বয়সী দর্শকরা হলে ভিড় জমালো শত্রু দেখার জন্য। এমনকি তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বললেন সকলকে শত্রু দেখা উচিত….

একজন সৎ এবং সাহসী পুলিশ অফিসার, শুভংকর সান্যাল, হরিদেব পুরে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করার জন্য একজন কুখ্যাত নেতা, নিশিকান্ত সাহা এবং তার সহযোগীদের ধরার সিদ্ধান্ত নেন। এক সৎ পুলিশ অফিসারের চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক সবার মন জয় করে নিলেন ঘরে ঘরে তার নাম তার ডায়ালগ সব যেন দাবানলের মতন ছড়িয়ে পড়ল। ছোট্টু নামে শিশু শিল্পীদের চরিত্র যা আজও লোকে মনে রেখেছে। ছবিটি সব দিক দিয়ে সফল ছিল এমনকি ইমোশনাল ড্রামা এবং অ্যাকশন সবকিছুতেই জয় করেছিল মানুষ এর হৃদয়, চিরঞ্জিত ,অনুপ কুমার, শকুন্তলা বড়ুয়া, মনোজ মিত্র বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি অভিনেতারা দারুণ অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন এই ছবিতে। এই ছবি বাংলা ছবির কাল্ট ক্লাসিকের ক্যাটাগরিতে পড়ে।এরপর বাংলা পারিবারিক ও সামাজিক ছবির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে গিয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরি ।

অঞ্জন চৌধুরীর জনপ্রিয় কিছু সিনেমা

অঞ্জন চৌধুরির তৈরি “শত্রু”, গুরুদক্ষিণা, বড়ো বৌ, মেজ বৌ, ছোটো বৌ, ঈশ্বর পরমেশ্বর, জীবন নিয়ে খেলা, মুখ্যমন্ত্রী, বিধিলিপি, বাঙালি বাবু, মায়া মমতা, দেবতা, ইন্দ্রজিৎ, মহাজন, হীরক জয়ন্তী, নবাব, বাহদূর, লোফার, শ্রীমান ভূতনাথ, পূজা, অভাগিনী, চৌধুরি পরিবার ইত্যাদি সুপারহিট ছবির পরিচালককে এই প্রজন্মের মানুষেরা কতটা চেনে? অঞ্জন চৌধুরির ছবি দেখার জন্য, গ্রাম মফস্বল শহর শহরতলি  মানুষ এর ঢল নামতো, তাকে বলা হতো বাংলা কমার্শিয়াল  ছবির রাজা।

এই মহান পরিচালকের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৫শে নভেম্বর বাংলাদেশের যশোর জেলায়। দেশভাগ এর পর চলে আসেন কলকাতায়। তার একমাত্র স্বপ্ন ছিল ছবি পরিচালনা করার। তার লেখালেখির হাত ভালো ছিল তিনি চুমকি নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকায় সম্পাদনা করতেন।  সেই লেখালেখি সুবাদেই অভিনেতা, রঞ্জিত মল্লিকের সাথে তার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব । তিনি তাকে এক প্রযোজকের কাছে নিয়ে যান। একটি ছবির ব্যাপারে তার আলোচনা হয়। কিন্তু প্রথমে তো তিনি পরিচালক হননি, তাই তিনি এই ছবির , স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ দেন।

পরিচালক ছিলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়।  এই ছবিতে উত্তম কুমারের একটা বিশেষ চরিত্র করার কথা ছিল। ওই সময় ছবির নাম রাখা হয়েছিল “হব ইতিহাস”। কিন্তু মহানায়কের অকাল প্রয়াণে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি সিনেমার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে আবার এই ছবির কাজ শুরু হয় । তখন এর পরিচালনার দায়িত্ব চলে আসে অঞ্জন চৌধুরীর কাছে। আর ছবির নাম  “হব ইতিহাস” থেকে পাল্টে হয় “শত্রু” এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রঞ্জিত মল্লিক মনোজ মিত্র এবং নবাগত চিরঞ্জিত, শকুন্তলা বড়ুয়া বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় এবং সব থেকে ভালো অভিনয় যেটা সবার নজর কেড়েছিল শিশু শিল্পী , মাস্টার তপু এই ছবির হাত ধারে আবার সিনেমা হল মুখি বাংলার দর্শক। এককথায় বলা যায় যে উত্তম পরবর্তীকালে বাংলা ছবি নবজাগরণ আনল শত্রু এরপর অঞ্জন চৌধুরীকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ।

অঞ্জন চৌধুরী যেটা প্লাস পয়েন্ট ছিল এটা হল বাংলা বা বাঙালির মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প এবং আশেপাশের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তিনি ছবির মাধ্যমে আমাদের সামনে আনতেন। অঞ্জন চৌধুরি হাত ধরেই সিনেমা হল তখন হাউসফুল। তার ছবির নায়ক তো একজন যেন পাশের বাড়ির কোন ছেলে। আর মা কাকিমারা হতেন বাংলার অসংখ্য কাকিমাদের মত একজন। তার ছবির হাত ধরে অনেক নায়ক নায়িকার উত্থান হয়েছে এবং অনেক পরিচালক উঠে এসেছে তার মধ্যে হরনাথ অন্যতম। এক কথায় উত্তম যুগের পর বাংলা কমার্শিয়াল ছবি রূপকার অঞ্জন চৌধুরীকে বলাই যেতে পারে। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক মৃণাল সেন যে-রকম বাংলা ছবির একটা স্তম্ভ ঠিক সেরকম একটা অঞ্জন চৌধুরীও দরকার ছিল ওই সময়।

রেকর্ডিং স্টুডিও-তে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে অঞ্জন চৌধুরী, স্ত্রী জয়শ্রী, এবং ছেলে সন্দীপ

২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী, এরপর দুই মেয়ে আর ছেলেক আঁকড়েই দিন কেটেছে তার স্ত্রী জয়শ্রী চৌধুরীর। কোনও ফিল্মের চিত্রনাট্যের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয় তাঁদের প্রেম কাহিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে জয়শ্রী চৌধুরী পরিচিত ছিলেন ঝুনুদি নামে। অঞ্জন চৌধুরী ঘনিষ্ঠ সকলেই একবাক্যে মেনে নেন ঝুনুদির আত্মত্যাগ ছাড়া অঞ্জন চৌধুরী কোনওদিন সফল হতে পারতেন না। এমনকী ছবি বানানোর নেশায় মত্ত স্বামীর হাতে নিজের গয়না তুলে দিতেও কোনওদিন কুন্ঠাবোধ করেননি।

‘শত্রু’,’গুরুদক্ষিণা’,’ছোট বউ’, ‘মেজো বউ’-কত অসংখ্য হিট ছবি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন অঞ্জন চৌধুরী। দ্য ওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়ে চুমকি চৌধুরী মায়ের স্মৃতিচারণা করে জানান, ‘মায়ের অনেক গুণ ছিল খুব ভাল গান গাইতে পারতেন, নাচের তালিম ছিল, ঘর সাজাতে ভালবাসতেন।

অঞ্জন চৌধুরীর দুই মেয়ে চুমকি চৌধুরী ও রিনা চৌধুরী।

অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালিত জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা-

  • শত্রু
  • গুরুদক্ষিণা
  • বড়ো বৌ
  • মেজ বৌ
  • সেজো বৌ
  • ছোটো বৌ
  • ঈশ্বর পরমেশ্বর
  • জীবন নিয়ে খেলা
  • মুখ্যমন্ত্রী
  • বিধিলিপি
  • বাঙালী বাবু
  • মায়া মমতা
  • দেবতা
  • প্রতিবাদ
  • ইন্দ্রজিত
  • মহাজন
  • হীরক জয়ন্তী
  • নবাব
  • বাহদুর
  • লোফার
  • শ্রীমান ভূতনাথ
  • কুরুক্ষেত্র
  • পূজা
  • চৌধুরী পরিবার
  • আসল নকল
শেয়ার করুন

Select Language

Magazine
সেমন্তি সৌমির এক ঝলক; সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্যাশনের ঢেউ | Samonty Shoumi কনিকার সেলিব্রেটেড ফ্যাশন | আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ | Model Konika ডিজে আভিলা | সৃজনশীলতার নতুন দিগন্তে এক উদীয়মান তারকা | DJ AVILA পিউ কাহার লাইফস্টাইল | ফ্যাশন, ফিটনেস এবং সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত | Model Peu Kaha লালবাগ কেল্লার রহস্যময় ইতিহাস বিদায় সাদা ফানুস | আয়োশী আক্তার মাহিয়া শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ Copa America Final 2024 | Argentina Vs Colombia Sonakshi Sinha And Zaheer Iqbal Fans Call Them Happy Couple মাউন্ট এভারেস্ট; পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের রহস্য ঐশ্বরিয়া রাই ও সালমান খান; সম্পর্কের রসায়ন ও বলিউডের বিতর্কিত অধ্যায় শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি | তারকার মতোই বিলাসবহুল জীবন সেলিব্রিটি স্পটলাইটে সেমন্তী সৌমি

LIVE SERIES

Home
Magazine
Live
Episode
Music
Search
Scroll to Top