“ছাইয়া ছাইয়া” গানটি মণি রত্নম পরিচালিত “দিল সে” সিনেমার একটি বিশেষ আকর্ষণ। গানের লিরিক্স লিখেছেন গুলজার, মিউজিক করেছেন এ আর রহমান, এবং কণ্ঠ দিয়েছেন সুখবিন্দর সিং ও স্বপ্না অস্থি। এই গানটি শুধু জনপ্রিয় নয়, বরং একে বলা হয় কাল্ট ক্লাসিক।
শুধু একটি গান বলাটা যথেষ্ট নয়। এই গানটি একটি আবেগের প্রকাশ। ৯০ দশকের বাচ্চাদের ছোটবেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গানটির সাথে। খেলনা মোবাইল, খেলনা বন্দুক, পিয়ানো বা খেলনা ট্রেন — সবখানেই “ছাইয়া ছাইয়া” গানটি তখন বাজতো। যদিও তখনো এই গানটি সেভাবে বুঝিনি বা উপলব্ধি করিনি, তবুও এর সুর আমাদের মনে দাগ কেটেছে।
এবার আসি এই গানের শুটিংয়ের কথা। তামিলনাড়ুর নীলগিরি পার্বত্য জেলার উদাগামান্ডালাম বা ওটি পাহাড়ি রেল স্টেশনে এই গানের শুটিং হয়েছিল। এটি এশিয়ার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ রেল স্টেশন এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের একটি অংশ। প্রথমে পরিচালক মণি রত্নমের ইচ্ছা ছিল স্টেশনে শুটিং করার। কিন্তু ৫ দিন স্টেশন বন্ধ রাখার প্রস্তাবে আপত্তি জানায় ভারতীয় রেলওয়ে।
এই সমস্যার সমাধান করেন কোরিওগ্রাফার ফারাহ খান। তিনি চলন্ত ট্রেনে শুটিং করার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব মেনে নিয়েও কাজটি সহজ ছিল না। গানটির জন্য প্রথমে নির্বাচন করা হয় শিল্পা শেঠি কে, কিন্তু চলন্ত ট্রেনে শুটিং করার কথা শুনে শিল্পা শেঠি শুটিং থেকে সরে যান, তার জায়গায় আসেন বলিউডের আরেক জনপ্রিয় আইটেম গানের শিল্পী মালাইকা অরোরা। মালাইকা অরোরা এই গানে পারফর্ম করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। চলন্ত ট্রেনে শুটিংয়ের জন্য মালাইকার ঘাগরার নিচে একটি রশি বাঁধা থাকত, যা নিচে থেকে কেউ ধরে রাখতেন। ৫ দিনের শুটিং শেষে দেখা যায়, রশির ঘর্ষণে তার কোমর থেকে রক্ত ঝরছে! তবে শাহরুখ খানের জন্য কোনো রশি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি প্রোটেকশন ছাড়েই চলন্ত ট্রেনে নেচেছেন, লাফিয়েছেন।
শাহরুখের ‘দিল সে’ সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা না হলেও শাহরুখের সেরা ৫ সিনেমার মধ্যে থাকবে এই গানটি! আর এই গানে শাহরুখের পারফর্মেন্স! এটা কি শুধুই পাগলামি নয়? একজন যদি তার ১০০% দিতে পারে, তবে শাহরুখ এই গানে পুরোপুরি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন।
এই গান এবং শাহরুখের পারফর্মেন্স সবসময় আমাদের মনে থাকবে। “ছাইয়া ছাইয়া” শুধুমাত্র একটি গান নয়, এটি একটি আবেগ, একটি পাগলামী এবং একটি শৈল্পিক কীর্তি।