সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না
বিরিয়ানি পছন্দ করেন না এমন কাওকে হয়ত খুজে পাওয়া যাবে না , আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার রান্নার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অন্যতম পরিচায়ক এই বিরিয়ানী। এই মজাদার খাবারটি তার অসাধারণ স্বাদ এবং সুবাসের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। বিরিয়ানি মূলত বাসমতি চাল, মাংস (মুরগি, গরু, খাসি), বিভিন্ন সুগন্ধি মসলা এবং দইয়ের সংমিশ্রণে তৈরি একটি বিশেষ খাবার। বিরিয়ানির ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং বহুমুখী। এর উৎপত্তি মুঘল আমলে হলেও, বর্তমানে এটি বিভিন্ন দেশ এবং সংস্কৃতিতে নানা রকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমাদের বাংলাদেশে বিরিয়ানি হলো এক অনন্য স্বাদের মেলবন্ধন, যেখানে ব্যবহৃত হয় স্থানীয় মসলা এবং উপকরণ।
বিরিয়ানি রান্নার মূল রহস্য হলো মসলার সঠিক মিশ্রণ এবং স্তর বিন্যাস। চাল ও মাংসের প্রতিটি স্তর একে অপরের সাথে মিশে তৈরি করে এক স্বর্গীয় স্বাদ। দমে রান্না করার ফলে এর প্রতিটি উপকরণের স্বাদ এবং সুবাস আরও বেশি ফুটে ওঠে। বিরিয়ানি শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি একটি আবেগ, যা পারিবারিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব পায়। ঈদ, বিয়ে, জন্মদিন বা অন্য কোনো আনন্দঘন মুহূর্তে বিরিয়ানি আমাদের তৃপ্তি এনে দেয়। এছাড়া এটি অতিথি আপ্যায়নের জন্যও অন্যতম প্রধান খাবার।
সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্নার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারেন এবং একই সাথে নিজেদের খাদ্যাভ্যাসকে করতে পারেন আরও সমৃদ্ধ। বিরিয়ানি এমন একটি অভিজ্ঞতা, যা একবার উপভোগ করলে বারবার সেই স্বাদের পুনরাবৃত্তি করতে ইচ্ছা করে। তাই, আসুন আমরা বিরিয়ানির এই অনন্য স্বাদ উপভোগ করতে এটা তৈরির সহজ এবং গোপন রেসিপিটি জেনে নেই এবং আমাদের রসনাতৃপ্তি করি। এই বিরিয়ানির রেসিপিটি অনুসরণ করে তৈরি করা খুবই সহজ, এবং এটি আপনার পরিবার ও অতিথিদের মুগ্ধ করবে।
সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
– বাসমতি চাল – ৪ কাপ
– মাংস (গরু অথবা খাসী) – ১ কেজি (বড় টুকরো করে কাটা)
– বিরিয়ানী মসলা – ৩ চা চামচ
– পেঁয়াজ – ৪টি (বড় করে কাটা)
– টমেটো – ৪টি (কাটা)
– দই – ১/২ কাপ
– গুড়া দুধ- ১ কাপ
– আদা-রসুন বাটা – ৪ টেবিল চামচ
– কাঁচা মরিচ – ৮-১০টি (চিরে কাটা)
– লবণ – স্বাদমতো
– হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
– মরিচ গুঁড়া – ২ চা চামচ
– জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
– ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
– গরম মশলা গুঁড়া – ২ চা চামচ
– ধনেপাতা ও পুদিনা পাতা – ১ কাপ (কুচানো)
– ঘি বা তেল – ১/২ কাপ
– কেওড়া জল – ২ টেবিল চামচ
– বাদাম, কিশমিশ
– জাফরান – ১ চিমটি (দুধে ভিজিয়ে রাখা)
– দারুচিনি – ৪ টুকরা
– এলাচ – ৬-৮টি
– লবঙ্গ – ৬-৮টি
– তেজপাতা – ৪টি
– গোলমরিচ – ৮-১০টি
– সিদ্ধ ডিম- ৩/৪ টা
– শশা- ৩/৪টা
প্রস্তুত প্রণালী:
1. **চাল রান্না:**
– প্রথমে বাসমতি চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
– একটি বড় পাতিলে পানি গরম করুন এবং তাতে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, তেজপাতা, স্বাদমত লবণ এবং সামান্য ঘি যোগ করুন।
– পানি ফুটে উঠলে তাতে ভিজিয়ে রাখা চাল দিন এবং ৭০-৮০% সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন (চাল সম্পূর্ন রান্না করবেন না)।
– চাল সিদ্ধ হলে পানি ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন।
2. **মাংসের মেরিনেশন:**
– একটি বড় বাটিতে বড় টুকরো করে কাটা ১কেজি পরিমাণ গরু অথবা খাসীর মাংস নিন।
– তাতে দই, আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, টমেটো সস, এবং কিছু লবণ যোগ করুন।
– এরপর ২চা চামচ বিরিয়ানী মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করুন।
3. **মাংস রান্না:**
– একটি বড় কড়াইতে ঘি বা তেল গরম করুন।
– পেঁয়াজ যোগ করে সোনালি বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
– টমেটো ও কাঁচা মরিচ যোগ করে নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
– মেরিনেট করা মাংস যোগ করে ভালোভাবে মেশান।
– ঢেকে মাঝারি আঁচে মাংস সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
4. **বিরিয়ানি স্তরবিন্যাস:**
– একটি বড় হাঁড়িতে প্রথমে কিছু রান্না করা মাংস রাখুন এবং সামান্য মাংসের ঝোল আলাদা করে রাখুন।
– তারপর কিছু আগে থেকে সিদ্ধ করে রাখা চাল ছড়িয়ে দিন, এরপর আবার কিছু মাংস ছড়িয়ে দিন।
– ২ চা চামচ বিরিয়ানী মসলা মাংসের মধ্যে ছিটিয়ে দিন।
– তারপর এর উপর কিছু কাঁচামরিচ, ধনেপাতা ও পুদিনা পাতা ছড়িয়ে দিন।
– এভাবে চাল, মাংস এবং ধনেপাতা-পুদিনা পাতা দিয়ে স্তর তৈরি করুন, সেইসাথে আলাদা করে রাখা মাংসের ঝোল ছিটিয়ে দিন।
– এরপর প্রয়োজনমত কিছু বাদাম, কিসমিস ছড়িয়ে দিন।
– প্রতিটি স্তরে সামান্য কেওড়া জল ও জাফরান দুধ ছড়িয়ে দিন।
5. **দম দেওয়া:**
– হাঁড়ির ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করুন যাতে বাষ্প বের হতে না পারে। প্রয়োজনে ময়দারি খামির দিয়ে হাঁড়ি ও ঢাকনার মুখ আটকে দিন।
– হাঁড়ির ঢাকনা বন্ধ করে একটি তাওয়ার উপর বসিয়ে হালকা আঁচে ২০-২৫ মিনিট দমে রাখুন।
6. **পরিবেশন:**
– হয়ে গেল সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না। আপনার বিরিয়ানি তৈরি হয়ে গেলে ধনেপাতা ও পুদিনা পাতা, শশা, সিদ্ধ ডিম ভাজা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
– পরিবেশন করতে এর সাথে সালাদের ব্যবহার করুন ।
আপনার ঘরে তৈরি করা এই সুস্বাদু বিরিয়ানি এবার পরিবারের সবার সাথে উপভোগ করুন।