Long Date & Time

বাংলাদেশের ঐতিহ্যের প্রতীক; হার্ডিঞ্জ ব্রিজ | শত বছরের ঐতিহ্য ও উন্নয়নের মিলনস্থল

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং ঐতিহাসিক রেলসেতু। পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই ব্রিজটি দেশের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এই সেতুটি এখনো বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী থেকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা পর্যন্ত যুক্তকারী একটি রেলসেতু। এই রেলসেতুটি কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এই ব্রিজটি এখনো দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রতিদিন শত শত ট্রেন এই ব্রিজ দিয়ে পার হয়।

নির্মাণের ইতিহাস
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯১০ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৫ সালে। সেতুটির নামকরণ করা হয় তৎকালীন ভারতীয় ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নামে। ব্রিজটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সহজ রেল যোগাযোগ স্থাপন করা।

প্রকৌশল ও নকশা
এই ব্রিজের নকশা করেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রালফ মুডি। ব্রিজটির মোট দৈর্ঘ্য ১.৮ কিলোমিটার এবং এতে ১৫টি স্প্যান রয়েছে। এটি স্টিলের তৈরি এবং নির্মাণের সময় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিজটি দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্য সহজে এবং দ্রুত দেশের অন্যান্য প্রান্তে পরিবহনে সহায়তা করে। এর ফলে কৃষকরা তাদের পণ্য দ্রুত বাজারজাত করতে পারে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে।

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ
বিগত শতাব্দীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে অগণিত ট্রেন চলাচল করেছে, যা সেতুটির ওপর চাপ বাড়িয়েছে। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে ব্রিজটির কার্যক্ষমতা বজায় রাখা হয়েছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শুধু একটি রেলসেতু নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতীক। ভবিষ্যতেও এই ব্রিজ দেশের রেল যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলসেতু। ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারীর পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই ব্রিজ। পাবনা জেলার পাকশী রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর ওপর এই সেতু অবস্থিত। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ব্রিজের ওপর দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে।
১৯০৮ সালে ব্রিজ নির্মাণের মঞ্জুরি পাওয়ার পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান প্রকৌশলী রবার্ট শুধু ব্রিজের নকশা প্রণয়ন করেন। ব্রিজের প্রথম প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যার এস এম রেলডলস। এই ব্রিজে রয়েছে ১৫টি মূল স্প্যান। মূল স্প্যান ছাড়াও দুপাশে রয়েছে তিনটি করে অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান। ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল রেইথ ওয়ালটি অ্যান্ড ক্রিক। সে সময় পদ্মা ছিল প্রমত্তা ও ভয়াল। পদ্মার ছিল তখন ভরা যৌবন। খরস্রোতা জলরাশিতে ছিল উত্তাল ঢেউ। এখন যৌবন হারিয়ে বাংলার অমর কীর্তি হার্ডিঞ্জ ব্রিজকে বুকে ধারণ করে আজও শির উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্রিজ নির্মাণের বড় সমস্যা ছিল নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিজের নিচ দিয়ে স্থায়ীভাবে পানি প্রবাহিত করা। ব্রিজটি নির্মাণের শত বছর পরও বিশ্বের প্রকৌশলীদের কাছে এটি বিস্ময়কর হয়ে আছে। ব্রিটিশ সরকারের নির্মিত Pakshi Harding Bridge এর খ্যাতি বিশাল পরিচয় বহন করে। বর্তমান সময়ে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের চেয়েও লম্বা অনেক ব্রীজ আছে। কিন্তু কিছু কিছু কারণে এ ব্রীজটি অপ্রতিদ্বন্দীভাবে বিখ্যাত। প্রথম কারণ হচ্ছে এ ব্রীজের ভিত গভীরতম পানির সর্বনিম্ন সীমা থেকে ১৬০ ফুট বা ১৯২ এমএসএল মাটির নিচে। এর মধ্যে ১৫ নম্বর স্তম্ভের কুয়া স্থাপিত হয়েছে পানি নিম্নসীমা থেকে ১শ ৫৯ দশমিক ৬০ ফুট নিচে। এছাড়া এর সর্বোচ্চ স্তম্ভের কুয়া সীমা থেকে ১শ ৯০ দশমিক ৬০ ফুট অর্থ্যাৎ সমুদ্রের গড় উচ্চতা থেকে ১শ ৪০ ফুট নীচে। সে সময় পৃথীবিতে এ ধরনের ভিত্তির মধ্যেই এটাই ছিল গভিরতম। হার্ডিঞ্জ ব্রীজটি অপূর্ব সুন্দর ও আর্কষণীয় হওয়াতে ব্রিটিশ ইন চীফ ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস’ কে সাফল্যের পুরস্কারস্বরূপ স্যার উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

নির্মাণ কালীন সময়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আলোকচিত্র, তারিখঃ ২৪ মার্চ ১৯১৩- ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহিত
কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজে আসার জন্য ট্রেন, বাস, কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে পাবনার ঈশ্বরদী যংশন হয়ে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা স্টেশনে আসতে হবে। সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম হল ট্রেন, কারণ ট্রেন ভ্রমণ করলে সরাসরি ব্রিজটির উপর দিয়ে যাওয়া যায়। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা স্টেশনে আসার পর পদ্মা নদী, নদীর চর, রেলসেতু এবং রেলপথ সরাসরি সবই দেখা যাবে।

দর্শনীয় স্থান

  1. ব্রিজের আর্কিটেকচার: ব্রিটিশ আমলের নির্মাণশৈলী ও স্টিলের কাঠামো দেখার মতো। ব্রিজটি ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এতে ১৫টি স্প্যান রয়েছে।
  2. পদ্মা নদী: ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  3. পাশাপাশি গ্রামগুলো: ব্রিজের দুই পাড়ে থাকা গ্রামগুলোর স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হওয়া যায়।

করণীয়

  1. ট্রেন ভ্রমণ: ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা। এটি আপনাকে ব্রিজের নির্মাণশৈলী ও নদীর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেবে।
  2. ফটোগ্রাফি: ব্রিজের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং স্থাপত্যের ছবি তোলার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
  3. স্থানীয় খাবার: কুষ্টিয়ার খাবাররের স্বাধ বিখ্যাত, তাই এখানে আসলে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

নিরাপত্তা পরামর্শ

  1. ট্রেন চলাচলের সময় সতর্কতা: ট্রেন চলাচলের সময় ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করা বিপজ্জনক হতে পারে।
  2. নদীর ধারে সাবধানতা: পদ্মা নদীর ধারে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন, বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীর স্রোত তীব্র হয়।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঈশ্বরদী, পাবনা

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শুধু একটি রেলসেতু নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং প্রকৌশল দক্ষতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ব্রিজটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছে। বাংলার পদ্মায় অমর কীর্তি হার্ডিঞ্জ ব্রিজকে বুকে ধারণ করে আজও শির উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শেয়ার করুন

Select Language

Magazine
সেমন্তি সৌমির এক ঝলক; সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্যাশনের ঢেউ | Samonty Shoumi কনিকার সেলিব্রেটেড ফ্যাশন | আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ | Model Konika ডিজে আভিলা | সৃজনশীলতার নতুন দিগন্তে এক উদীয়মান তারকা | DJ AVILA পিউ কাহার লাইফস্টাইল | ফ্যাশন, ফিটনেস এবং সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত | Model Peu Kaha লালবাগ কেল্লার রহস্যময় ইতিহাস বিদায় সাদা ফানুস | আয়োশী আক্তার মাহিয়া শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ Copa America Final 2024 | Argentina Vs Colombia Sonakshi Sinha And Zaheer Iqbal Fans Call Them Happy Couple মাউন্ট এভারেস্ট; পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের রহস্য ঐশ্বরিয়া রাই ও সালমান খান; সম্পর্কের রসায়ন ও বলিউডের বিতর্কিত অধ্যায় শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি | তারকার মতোই বিলাসবহুল জীবন সেলিব্রিটি স্পটলাইটে সেমন্তী সৌমি

LIVE SERIES

Home
Magazine
Live
Episode
Music
Search
Scroll to Top