Long Date & Time

লালবাগ কেল্লার রহস্যময় ইতিহাস

সময়ের সাক্ষী লালবাগ কেল্লার ইতিহাসের অমলিন গল্প

লালবাগ কেল্লা হল একটি ঐতিহাসিক দুর্গ যা বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মুঘল স্থাপত্য। এটি মুঘল আমলে নির্মিত একটি অর্ধসমাপ্ত দুর্গ। লালবাগ কেল্লা ১৭ শতকের শেষ দিকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবাহদার আজম শাহ নির্মাণের কাজ শুরু করেন, তবে এটি সম্পূর্ণ হয়নি।

লালবাগ কেল্লা তিনটি মূল অংশ নিয়ে গঠিত:

  1. দরবার হল (হামামখানা): এটি দুর্গের প্রধান অংশ যেখানে মুঘল শাসকরা সভা করতেন। এটি সুন্দর কারুকাজ ও স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ।
  2. পরী বিবির মাজার: এটি লালবাগ কেল্লার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পারী বিবি ছিলেন সুবাহদার শায়েস্তা খানের কন্যা। তার সম্মানার্থে এই মাজারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মাজারটি সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এবং একটি চমৎকার উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
  3. দুর্গের বাকি অংশ: এই অংশে একটি বড় বাগান, পানির চ্যানেল এবং দুর্গ প্রাচীর রয়েছে। এখানে আরো রয়েছে কিছু ছোট ছোট কাঠামো যা সেই সময়ের জীবনধারার ইঙ্গিত দেয়।

লালবাগ কেল্লা যেভাবে যাবেন
ঢাকা অথবা বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা অথবা লেগুনাতে করে কেল্লায় যেতে পারবেন। ঢাকার অথবা বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ঢাকার নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ, টিএসসি অথবা আজিমপুর এসে রিকশায় করে যেতে পারবেন লালবাগ কেল্লায়।

টিকিট মূল্য
বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা আর বিদেশিদের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। পাঁচ বছরের পর্যন্ত শিশুদের কোনো টিকেট লাগে না।

লালবাগ কেল্লা খোলা-বন্ধের সময়সূচি
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে, আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রতি রোববার লালবাগ কেল্লা সম্পূর্ন বন্ধ থাকেি এবং সোমবার অর্ধদিবস কেল্লা বন্ধ থাকে। এছাড়া সব সরকারি ছুটির দিনে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।

ইতিহাসের স্বাক্ষী লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত, সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গল্পে পরিপূর্ণ। আমাদের ইতিহাসের পথ ধরে হাঁটতে গেলে যে স্থানগুলো আমাদের অতীতের গৌরবময় অধ্যায়ের কথা বলে, তাদের মধ্যে একটি হলো লালবাগ কেল্লা। কেল্লার ভেতরের স্থাপত্য ও কক্ষগুলিতে মুঘল আমলের অভিজাত জীবনের চিত্র পাওয়া যায়। আজ আমরা ডুব দেবো সেই ইতিহাসে, যা এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার বুকে, বহন করছে শতাব্দীর পুরোনো স্মৃতি।ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দাঁড়িয়ে থাকা লালবাগ কেল্লা শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন থেকে শুরু করে বাংলার ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই কেল্লা। আজ আমরা জানবো লালবাগ কেল্লার সঙ্গে জড়িত ইতিহাস।

লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা- ছবি সংগৃহিত

লালবাগ কেল্লার ভেতরে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে, যা মুঘল বাগানের একটি নিদর্শন। ফুলের গাছ, ফোয়ারা ও সবুজ ঘাসে মোড়া এই বাগানটি কেল্লার শান্ত ও সৌন্দর্যময় পরিবেশকে বাড়িয়ে তুলেছে। কেল্লার কিছু অংশ এখনো রহস্যে ঘেরা। এর কিছু কক্ষ, যেগুলোর গোপন দরজা ও সুড়ঙ্গ রয়েছে, তাদের নিয়ে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। লোকমুখে শোনা যায়, এসব পথ মুঘল রাজপরিবারের নিরাপদ বহির্গমনের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো।

১৬৭৮ সাল, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ আজম শাহের ঢাকা আগমন। তিনি একটি শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন, যা হবে মুঘল সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এই পরিকল্পনার ফলেই গড়ে উঠতে শুরু করে লালবাগ কেল্লা।

লালবাগ কেল্লা, যা ১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ আজম শাহের হাতে নির্মিত হয়েছিলো। কিন্তু তিনি কেল্লাটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তাকে আকস্মিকভাবে অন্যত্র চলে যেতে হয়। এরপর কেল্লার নির্মাণের দায়িত্ব পান শায়েস্তা খান। শায়েস্তা খান, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিশ্বস্ত সেনাপতি, তিনি যখন কেল্লার দায়িত্ব নেন, তখন এটি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে উঠছিলো। তবে, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই তার কন্যা পরীবিবির অকালমৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় শায়েস্তা খান কেল্লার নির্মাণ বন্ধ করে দেন, এবং এটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়। এটি শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি, তবু এই স্থাপত্যে মুঘল স্থাপত্যের সৌন্দর্য, কৌশল, এবং নৈপুণ্যের নিদর্শন ফুটে ।

লালবাগ কেল্লা- ছবি সংগৃহিত

পরীবিবির মাজার
লালবাগ কেল্লার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পরীবিবির মাজার। এটি কেল্লার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান। প্রিয়কন্যা পরীবিবির প্রতি শায়েস্তা খানের গভীর ভালোবাসা এবং শোকের প্রতীক এই মাজার। আজও এই স্থান বেদনার একটি চিহ্ন হয়ে রয়েছে।

পরি বিবির মাজার- ছবি সংগৃহিত

লালবাগ কেল্লার রহস্যময় সুড়ঙ্গ
লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ সম্পর্কে একটি রহস্যময় এবং কৌতূহল উদ্রেককারী ইতিহাস রয়েছে। বলা হয় যে, লালবাগ কেল্লায় এক বা একাধিক সুড়ঙ্গ ছিল, যা দুর্গের ভেতরে থেকে বাইরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই সুড়ঙ্গগুলি সম্ভবত দুর্গের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যাতে শত্রুর আক্রমণের সময় রাজপরিবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে।

জনশ্রুতি আছে যে, লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গগুলি ঢাকার অন্যান্য স্থাপনার সাথে সংযুক্ত ছিল। বলা হয়, এক সুড়ঙ্গ ঢাকার অন্যান্য অংশে এবং আরেকটি সুড়ঙ্গ নদীর তীরে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে, এই সুড়ঙ্গগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

লালবাগ কেল্লার গোপন সুড়ঙ্গ পথ – ছবি সংগৃহিত

সুরঙ্গগুলি নিয়ে কিছু ভয়াবহ গল্পও প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, যারা এই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করতেন তারা আর ফিরে আসতেন না। এজন্য, ব্রিটিশ শাসনের সময় এবং তারপরে এই সুড়ঙ্গগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই সুড়ঙ্গগুলির প্রবেশপথ দেখা যায় না, এবং সুড়ঙ্গগুলির আসল অবস্থান বা তাদের গন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এই সুড়ঙ্গগুলির রহস্য এখনও মানুষকে আকর্ষণ করে এবং লালবাগ কেল্লার ইতিহাসে একটি চমকপ্রদ অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা শুধু মুঘল আমলের নয়, ব্রিটিশদের কাছে বাংলার পরাজয়ের পর ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে, কেল্লাটি সামরিক কুঠি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতো। তবে মুঘল আমলের গৌরব ম্লান হতে থাকে, এবং কেল্লা তার পূর্ণতা আর ফিরে পায়নি। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী বিদ্রোহীরা কেল্লাটিকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিলো।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, যা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম নামে পরিচিত এবং ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলো বাংলার সিপাহীরাও, আর এই বিদ্রোহের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিলো লালবাগ কেল্লা। আজ আমরা ফিরে যাবো সেই সময়ের ইতিহাসে, যখন লালবাগ কেল্লা হয়ে উঠেছিলো ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় লালবাগ কেল্লা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো। সিপাহী বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই কেল্লাকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিলো।

লালবাগ কেল্লার ভেতরে সিপাহী বিদ্রোহীরা নিজেদের সংগঠিত করে এবং বিদ্রোহের পরিকল্পনা করে। তারা ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলেছিলো। কেল্লার মজবুত দেয়ালের ভেতরে তারা অস্ত্র-শস্ত্র প্রস্তুত করেছিলো এবং লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করেছিলো। ব্রিটিশ শাসকরা বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করতে লালবাগ কেল্লার ওপর আক্রমণ চালায়। কেল্লার ভেতরে এবং আশেপাশে তীব্র যুদ্ধ চলে।

বিদ্রোহীরা তাদের জীবনের বিনিময়ে এই কেল্লাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্রিটিশদের শক্তিশালী বাহিনীর সামনে তারা ধীরে ধীরে পরাজিত হতে থাকে। যুদ্ধের পর, বিদ্রোহীরা ধীরে ধীরে পরাজিত হয় এবং ব্রিটিশরা কেল্লার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই পরাজয় সিপাহী বিদ্রোহের চূড়ান্ত ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রিটিশ শাসকরা এই বিদ্রোহকে দমনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বিদ্রোহীদের ওপর নির্যাতন চালায়। যদিও সিপাহী বিদ্রোহ সফল হয়নি, তবু লালবাগ কেল্লার দেয়ালগুলো এখনো সেই সংগ্রামের কথা বলে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সাহসী সিপাহীদের, যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলো।

মোঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন
আজ, লালবাগ কেল্লা একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ইতিহাসের সেই গৌরবময় ও বেদনাময় অধ্যায় লেখা আছে। এই কেল্লা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সেই গৌরবময় মুহূর্তগুলোকে, যা আমাদের স্বাধীনতার পথকে উজ্জ্বল করেছিলো।

লালবাগ কেল্লা, ইতিহাসের এক মূর্ত প্রতীক, আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা কখনোই সহজে পাওয়া যায় না। এটি একটি স্মৃতি, যা আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বহন করে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের গল্প। আজও, লালবাগ কেল্লা ঢাকার আকাশে অম্লান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে রয়েছে আমাদের ইতিহাসের এক গভীর অধ্যায়।

এই অপূর্ণ কেল্লা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সময়ের অমোঘ পরিবর্তনের কথা, যা চিরকাল ধরে রেখে যাবে আমাদের গৌরবময় অতীতের স্মৃতি। বর্তমানে, লালবাগ কেল্লা একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এটি আমাদের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী, যেখানে প্রতি ইটে, প্রতি প্রাঙ্গণে লেখা আছে আমাদের গৌরবময় ও বেদনার কাহিনী।

লালবাগ কেল্লা ঢাকার একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এই কেল্লা আমাদের অতীতের কথা বলে, আমাদের শিকড়ের কথা বলে। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি আমাদের জাতির ইতিহাসের একটি অমূল্য সম্পদ। যা মুঘল আমলের স্থাপত্য এবং ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

শেয়ার করুন

Select Language

Magazine
সেমন্তি সৌমির এক ঝলক; সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্যাশনের ঢেউ | Samonty Shoumi কনিকার সেলিব্রেটেড ফ্যাশন | আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ | Model Konika ডিজে আভিলা | সৃজনশীলতার নতুন দিগন্তে এক উদীয়মান তারকা | DJ AVILA পিউ কাহার লাইফস্টাইল | ফ্যাশন, ফিটনেস এবং সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত | Model Peu Kaha লালবাগ কেল্লার রহস্যময় ইতিহাস বিদায় সাদা ফানুস | আয়োশী আক্তার মাহিয়া শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ Copa America Final 2024 | Argentina Vs Colombia Sonakshi Sinha And Zaheer Iqbal Fans Call Them Happy Couple মাউন্ট এভারেস্ট; পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের রহস্য ঐশ্বরিয়া রাই ও সালমান খান; সম্পর্কের রসায়ন ও বলিউডের বিতর্কিত অধ্যায় শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি | তারকার মতোই বিলাসবহুল জীবন সেলিব্রিটি স্পটলাইটে সেমন্তী সৌমি

LIVE SERIES

Home
Magazine
Live
Episode
Music
Search
Scroll to Top