কনস্টান্টিনোপল বিজয়
তারিখ | ৬ এপ্রিল – ২৯ মে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দ |
অবস্থান | কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তানবুল)৪১.০১৬৭° উত্তর ২৮.৯৭৬৯° পূর্ব |
ফলাফল | উসমানীয়দের চূড়ান্ত বিজয়; বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন; কনস্টান্টিনোপল উসমানীয় সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ; মধ্য যুগের সমাপ্তি এবং রেনেসার সূচনা |
কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তানবুল) পূর্বে এটি পূর্ব রোমান (বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। শহর অধিকারের পূর্বে এটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত অবরোধের সম্মুখীন হয়। এরপর চূড়ান্তভাবে শহরটি উসমানীয়দের অধিকারে আসে। তারও পুর্বে মহান সেলযুক সুলতান আল্প আরসালান ও শহরটি জয় করেছিলেন কিন্তু এর দখল ধরে রাখতে পারেননি। পরবর্তী ১১ শতাব্দী যাবত শহরটি বেশ কয়েকবার অবরোধ সম্মুখীন হলেও ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ছাড়া এটি কেউ দখল করতে পারেনি।
কনস্টান্টিনোপল বিজয়কে ১৫০০ বছরের মত টিকে থাকা রোমান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উসমানীয়দের এই বিজয়ের ফলে উসমানীয় সেনাদের সামনে ইউরোপে অগ্রসর হওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকল না। বিজয়ের পর সুলতান মুহাম্মদ তার রাজধানী এড্রিনোপল থেকে সরিয়ে কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তানবুল) নিয়ে আসেন।
ক্রুসেডাররা কনস্টান্টিনোপলকে ঘিরে একটি অস্থায়ী ল্যাটিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তবে সাম্রাজ্যের বাকি অংশ বেশ কিছু গ্রীক রাষ্ট্র, বিশেষ করে নাইসিয়া, এপিরাস ও ট্রেবিজন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই গ্রীকরা মিত্র হিসেবে ল্যাটিন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করলেও বাইজেন্টাইন মুকুটের জন্যও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয় তারা। নাইসিয়ানরা ১২৬১ সালে কনস্টান্টিনোপল অধিকার করে নেন। দুর্বল সেই সাম্রাজ্যে অল্প পরিমাণে শান্তি বিরাজ করছিল। তারপর ল্যাটিন, সার্বিয়ান, বুলগেরিয়ান এবং উসমানীয় তুর্কিরা আক্রমণ করে।
১৩৪৬ থেকে ১৩৪৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ব্ল্যাক ডেথ বলে পরিচিত মহামারীতে শহরের প্রায় অর্ধেক অধিবাসী মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়াও দুই শতাব্দী আগে ক্রুসেডারদের আক্রমণে ফলে অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক আধিপত্য খর্ব হওয়ার কারণে লোকসংখ্যা কমছিল। ফলে ১৪৫৩ সালে শহরটি বড় মাঠ দ্বারা পৃথক করা কিছু দেয়ালঘেরা গ্রামের সমষ্টি ছিল। পুরো শহরটির চারদিক পঞ্চম শতাব্দীর থিওডোসিয়ান দেয়াল দ্বারা ঘেরা ছিল।১৪৫০ সাল নাগাদ সাম্রাজ্য ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পড়ে। সেসময় শহরের বাইরের কয়েক বর্গ মাইল, মারমারা সাগরের প্রিন্স দ্বীপ ও পেলোপন্নিস এবং এর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিস্ট্রাস নিয়ে গঠিত ছিল। চতুর্থ ক্রুসেডের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট স্বাধীন ট্রেবিজন্ড সাম্রাজ্য কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে টিকে ছিল।
১৪৫১ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ তার পিতার উত্তরাধিকারী হন। ১৯ বছর বয়সী তরুণ শাসক অযোগ্য হবেন এবং বলকান এবং এজিয়ান অঞ্চলের খ্রিষ্টানদের জন্য হুমকি হবেন না বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হত। তার দরবারে পাঠানো দূতদের সাথে মুহাম্মদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এই ধারণাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু তার কাজ তার কথার চাইতেও শক্ত প্রমাণিত হয়। ১৪৫২ এর শুরুতে তিনি বসফোরাসে রুমেলি হিসারি নামক দ্বিতীয় উসমানীয় দুর্গ গড়ে তোলেন। কনস্টান্টিনোপলের কয়েক মাইল উত্তরে ইউরোপীয় অংশ সেই দুর্গ গড়ে তোলা হয়। তার প্রপিতামহ প্রথম বায়েজিদ সেই দুর্গের অনুরূপ আনাদোলু হিসারি তৈরী করেছিলেন। এটি এশীয় অংশে ছিল। সেই দুর্গ দুটির কারণে তুর্কিরা বসফরাসের উপর চলমান নৌযানের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়।বিশেষত এটি উত্তরে কৃষ্ণ সাগর উপকূলের জেনোয়া কলোনি থেকে কনস্টান্টিনোপল আসার পথে বাধা প্রদান করে। কৌশলগত অবস্থানের কারণে নতুন দুর্গকে ‘’বোগাযকেসেন’’ বলা হত যার অর্থ “প্রণালি-রুদ্ধকারী” বা “গলা-কর্তনকারী”।
১৪৫২ সালের অক্টোবর সুলতান মুহাম্মদ তুরাখান বেগকে পেলোপন্নিসের উদ্দেশ্যে বিরাট এক নৌবহর নিয়ে অভিযানের নির্দেশ দেন এবং আসন্ন কনস্টান্টিনোপল অবরোধের সময় যাতে থমাস এবং ডেমেট্রিওস তাদের ভাই সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন পেলেইওলোগসকে সাহায্য করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থানের নির্দেশ দেন।বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন সুলতান মুহাম্মদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন এবং পশ্চিম ইউরোপের কাছে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু শতাব্দীব্যাপী যুদ্ধ ও পূর্ব এবং পশ্চিমের চার্চের মধ্যকার বিরোধের ফলে কাঙ্খিত সাহায্য পাওয়া যায়নি।
১০৫৪ সাল থেকে ইস্টার্ন চার্চের উপর পোপ আধিপত্য আরোপ করছেন বলে অভিযোগ ছিল। ১২৭৪ সালে প্রতীকী ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হয় এবং প্রকৃতই কিছু পেলেইওলোগি সম্রাটকে ল্যাটিন চার্চে গ্রহণ করা হয়। সম্রাট অষ্টম জন পেলেইওলোগস কিছুকাল পূর্বে ফ্লোরেন্স কাউন্সিলে পোপ চতুর্থ ইউজেনের ইউনিয়নের ব্যাপারে আলোচনা করেন। আর সেসব ঘটনার ফলে কনস্টান্টিনোপলের ইউনিয়নে বিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা শুরু হয় এবং বাইজেন্টাইন চার্চের জনগণ ও নেতৃবৃন্দ বিভক্ত হয়ে পড়ে। গ্রীক এবং ইটালিয়ানদের মধ্যকার জাতিগত বিদ্বেষ যা ১২০৪ এ ল্যাটিনদের কনস্টান্টিনোপল আক্রমণের সময় থেকে শুরু হয়েছিল তাও সৈক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ফলে ইউনিয়নটি ব্যর্থ হয়। পোপ পঞ্চম নিকোলাস ও রোমান চার্চ এর ফলে খুবই অসন্তুষ্ট হয়।
১৪৫২ সালের গরমকালে রুমেলি হিসারি নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ঝুকি খুবই নিকটবর্তী হয়ে পড়ে। ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনস্টান্টাইন পোপকে চিঠি লেখেন। পোপ পঞ্চম নিকোলাস সুযোগ ব্যবহারে আগ্রহী থাকলেও পশ্চিমা রাজন্যবর্গের উপর তার প্রভাব বাইজেন্টাইনদের আকাঙ্খা অনুযায়ী ছিল না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পোপের বর্ধিষ্ণু নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে ছিল। বিশেষত ইউরোপে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যকার একশত বছরব্যাপী যুদ্ধ, স্পেনের রিকনকোয়েস্টার চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান, জার্মান রাজ্যগুলোর মধ্যে লড়াই এবং ১৪৪৪ সালে ভারনার যুদ্ধে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের পতন সেসব ঘটনার কারণে কাঙ্খিত সাহায্য পাওয়া যায়নি। উত্তর ইটালির বাণিজ্যিক নগর রাষ্ট্রগুলো থেকে কিছু সৈনিক আসলেও উসমানীয়দের সাথে পাল্লা দিতে পারার মত পশ্চিমা অবদান খুবই নগন্য ছিল। কিছু পশ্চিমা ব্যক্তি তাদের নিজ উদ্যোগে শহর রক্ষায় এগিয়ে আসে। তাদের অন্যতম হলেন জেনোয়ার সুদক্ষ সৈনিক জিওভান্নো জিসটিনিয়ানি। তিনি ১৪৫৩ এর জানুয়ারি ৭০০ জন সৈনিক নিয়ে উপস্থিত হন। দেয়ালঘেরা শহর রক্ষায় তার দক্ষতার জন্য জন্য সম্রাট তাকে দেয়ালের প্রতিরক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেন। একই সময় গোল্ডেন হর্নে অবস্থানরত ভেনিসিয়ান জাহাজগুলো ভেনিসের অনুমতি ছাড়াই সম্রাটকে তাদের দায়িত্ব গ্রহণের আগ্রহ জানায়। পোপ নিকোলাস তিনটি জাহাজ সাহায্যের জন্য পাঠান। সেগুলো মার্চের শেষের দিকে যাত্রা করে।
ইতিমধ্যে ভেনিসে সে বিষয়ে আলাপ শুরু হয় যে তারা কনস্টান্টিনোপলকে কী ধরনের সাহায্য প্রদান করবে। সিনেটে একটি নৌবহর প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তাতে দেরী হয়ে যায়। এপ্রিলে যখন সেটি যাত্রা করে তখন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছিল।একই সময় কনস্টান্টাইন উপহার প্রদানের মাধ্যমে সুলতানকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার দূতকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার ফলে সে চেষ্টাও ব্যাহত হয়। ফলে বাইজেন্টাইনদের কূটনীতিতে কাজ হয়নি। গোল্ডেন হর্ন থেকে নৌ হামলার আশঙ্কা থেকে সম্রাট কনস্টান্টাইন পোতাশ্রয়ের মুখে একটি শিকল লাগানোর আদেশ দেন। সেই শিকল যেকোনো তুর্কি জাহাজকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। বিদেশী সাহায্য আসার আগ পর্যন্ত অবরোধের সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে বাইজেন্টাইনরা যে দুটি কৌশলের উপর নির্ভরশীল ছিল এটি হল তার অন্যতম।
১২০৪ সালের চতুর্থ ক্রুসেডের সময় শত্রুরা গোল্ডেন হর্ন দিক থেকে দেওয়াল ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই সেই কৌশল প্রয়োগ করা হয়। কনস্টান্টিনোপলের প্রতিরক্ষার জন্য নিয়োজিত বাহিনীর সেনাসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এতে সর্বমোট ৭০০০ সৈনিক ছিল যাদের মধ্যে ২০০০ জন ছিল বিদেশী। অবরোধ আরোপের সময় আশপাশের এলাকা থেকে আগত শরণার্থীসহ মোট ৫০,০০০ এর মত মানুষ ছিল বলে ধারণা করা হয়। সম্রাটের বেতনভুক্ত তুর্কি কমান্ডার ডোরগানো সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী শহরের একটি অংশ বেতনভুক্ত তুর্কিদের সাহায্যে রক্ষার দায়িত্ব পান। এই তুর্কিরা সম্রাটের প্রতি অনুগত থাকেএবং পরবর্তী লড়াইয়ে প্রাণ হারায়।অন্যদিকে উসমানীয়রা লোকবলের দিক থেকে ব্যাপক পরিমাণে ছিল। সাম্প্রতিক গবেষণা ও উসমানীয় আর্কাইভের তথ্য থেকে জানা যায় যে ৫০,০০০-৮০,০০০ উসমানীয় সৈনিক এতে অংশ নেয়। এদের মধ্যে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ জেনিসারি ছিল। জেনিসারিরা হল উচ্চশ্রেণীর পদাতিক সেনা। সেসাথে হাজার হাজার খ্রিষ্টান সৈনিক, যাদের মধ্যে সার্বিয়ান নেতা ডুরাড ব্রানকোভিকের পাঠানো ১,৫০০ সার্বিয়ান অশ্বারোহী যুদ্ধে অংশ নেয়। সুলতানের প্রতি আনুগত্য হিসেবে এই সেনাদেরকে পাঠানো হয়। কিন্তু এর কয়েকমাস পূর্বে তিনি কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থ পাঠিয়েছিলেন। অবরোধের সমসাময়িক পশ্চিমা সাক্ষীরা অতিরঞ্জিত করে সুলতানের সামরিক ক্ষমতার বর্ণনা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে ১,৬০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ বা ৩,০০,০০০ পর্যন্ত সৈনিক ছিল।
কনস্টান্টিনোপলের মতো শহর জয় করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল, সুলতান মুহাম্মদ তার সবই অতি সতর্কতার সঙ্গে অবলম্বন করেন। সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষিত করেন; তাদের মধ্যে জাগ্রত করেন ধর্মীয় চেতনা। বিশাল আকারের কামান নির্মাণ করেন; যার সাহায্যে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করা হবে। এছাড়া যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই ১৪৫৩ সালে শহর অবরোধ করেন।
সুলতান এটা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে নৌপথে প্রবল অবরোধ করা ছাড়া কিছুতেই বিজয়ের আশা করা যাবে না। সেজন্য নৌবাহিনীকে সুসজ্জিত করা হয় এবং নৌবহরে যুক্ত করা হয় অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ।
সমুদ্রপথে গোল্ডেন হর্নের দখল নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। কারণ, বাইজান্টাইনরা গোল্ডেন হর্নের প্রবেশপথে মোটা লোহার শিকল দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছিল। সুলতান এটা বেশ ভালোই জানতেন যে, গোল্ডেন হর্নের দখল নিতে না পারলে শহর জয় করা সম্ভব হবে না।
এই সময় তাঁর মাথায় অভূতপূর্ব এক পরিকল্পনা খেলে যায়; যা গোটা সমর-ইতিহাসেই একেবারে অভিনব। এমন চিন্তা দূরে থাক, কেউ কখনো এটা কল্পনা করেছে কিনা সন্দেহ! তিনি স্থলপথে জাহাজ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। এবং এই পথের দূরত্বও কম নয়; মাত্র তিন কিলোমিটার!
কেউ কখনো ভাবতে পেরেছে যে জলের জাহাজ ডাঙা দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে! সুলতান মুহাম্মদ সেটাই চিন্তা করলেন এবং তার বাস্তবায়ন করেও দেখালেন। গোটা যুদ্ধ-ইতিহাসই তিনি নতুনভাবে লিখিয়ে ছাড়লেন যেন! বড় কোনোকিছু জয় করতে হলে যে পরিকল্পনাটাও বড় করেই সাজাতে হয়—এটাই কিন্তু এখানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
এই তিন কিলোমিটার পথ মোটেও সমতল ছিল না। এবড়োথেবড়ো পথ সেনাদের দিয়ে যথাসম্ভব সমান করা হলো প্রথমে। তারপর পুরো পথের ওপর তেল দ্বারা পিচ্ছিল করা কাঠের তক্তা বসানো হয়। এর ওপর দিয়েই একে একে ৭০ টিরও অধিক জাহাজ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গোল্ডেন হর্নে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো—এই পুরো কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা হয় মাত্র এক রাতের মধ্যেই! বাইজান্টাইন সেনাবাহিনী কিংবা শহরের জনগণ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কিছু!
পরদিন সকালে শহরবাসী ঘুম থেকে জেগেই দেখতে পেল গোল্ডেন হর্নে উসমানিদের পতাকাবাহী জাহাজ অবরোধ আরোপ করে বসে আছে। এমন অলৌকিক কাণ্ড এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। তারা কিছুতেই ভেবে বের করতে পারলো না কীভাবে এই জাহাজগুলো এখানে এলো! এভাবে নানা ঘটনা পরিক্রমায় মুসলমানদের হাতে পতন হয় কনস্টান্টিনোপল। শুরু হয় ইস্তাম্বুলের নতুন ইতিহাস।