Long Date & Time

উত্তমকুমার প্রসঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তী

বায়ে উত্তম কুমার এবং ডানে মিঠুন চক্রবর্তী – ছবি সংগৃহিত

“তুমি মিঠুন না ?”
হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে দেখি, স্বয়ং উত্তমকুমার । প্রণাম করে বললাম “আপনি এই ভিড়ের মধ্যে আমায় কি করে চিনলেন ?” বললেন “সে কি, তোমায় আমি চিনবো না । বোম্বের মতন জায়গায় তুমি কত কষ্ট করে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছো । ফিল্ম দুনিয়াটা বড়ো কঠিন জায়গা, একটু জমির জন্য কত লড়াই না করতে হয় । এখানে কেউ কারোর জন্য জায়গা ছেড়ে দেয় না, জোর করে আদায় করে নিতে হয় । মনে রাখবে, বড়ো তোমায় হতেই হবে । তোমার মধ্যে সে জেদ আছে ।”

কথাগুলো বলে সোজা সেলিব্রেশন পার্টির লনে চলে গেলেন উত্তমকুমার । তাঁর হিন্দি ছবি ‘অমানুষ’ সুপারহিট হওয়ার দৌলতে বিশাল পার্টি দিয়েছেন প্রযোজক-পরিচালক শক্তি সামন্ত । ওই ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে আমি শ্যুটিং করছি চান্দেভ্যালি স্টুডিওতে । তখন আমার কিছুটা নাম হয়েছে ‘সুরক্ষা’র দৌলতে । হঠাৎ দেখি, সেটে ঢুকছেন উত্তমকুমার । আমি তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ওঁকে প্রণাম করলাম । বললেন “দরকার আছে তোর সঙ্গে ।” আমি তো অবাক, আমার সাথে দাদার কি দরকার থাকতে পারে । তার উপর তুমি থেকে ‘তুই’ সম্বোধনে আমি আরও বিস্মিত । আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললাম “তুমি আমাকে ডেকে পাঠালেই পারতে । তুমি শুধু শুধু কষ্ট করে আমার কাছে ছুটে এলে কেনো ?” আমার কথায় দাদা হেসে বললেন “না এলে তোর শ্যুটিংটা কি দেখতে পেতাম ? হ্যাঁ ভালো কথা, মন দিয়ে কাজ করবি । সময়মত শ্যুটিংয়ে আসবি, তাড়াহুড়ো করে শ্যুটিং শেষ করবি না । যতক্ষণ না নিজে স্যাটিসফাইড হবি, ততক্ষণ শট দিবি । জানবি এগুলোই ওপরে ওঠার সিঁড়ি, প্রধান অস্ত্র ।”

পরদিন সকালে উঠেই ছুটলাম দাদার কাছে । বান্দ্রায় উঠেছিলেন একটা ফ্ল্যাটে, ডোর বেল বাজাতেই দরজা খুললেন স্বয়ং দাদা । পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেই তাড়াতাড়ি আমার হাতদুটো ধরে টেনে বললেন “সবসময় পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবি না ।” বললাম বাবা মা এটা শিখিয়েছেন, বলে দিয়েছেন গুরুজনদের প্রণাম করবি । সঙ্গে সঙ্গে দাদা উত্তর দিলেন “নিশ্চই করবি, তবে আমার বেলায় বছরে একবার ।”
ব্রেকফাস্টে এসে পুরো লাঞ্চ খাওয়া হয়ে গেল । দাদা শুধু দুপিস মাখন ছাড়া স্যাঁকা পাউরুটি চায়ের সাথে খাচ্ছেন । আমি বেণুদির হাতের লুচি, তরকারি, বেগুনভাজা আর হালুয়া খেয়ে চলেছি । দাদা একসময় খেতে খেতে বললেন “আমার ছবিতে কাজ করবি ? ছবির দুটো প্রধান চরিত্র । একটায় তুই করবি, আরেকটায় আমি । কি রাজি ?”
আমি তো আকাশ থেকে পড়ি । দাদার সাথে কাজ করা আমার সারাজীবনের স্বপ্ন । আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলি “আমি আবার রাজি হবো না । তোমার সঙ্গে কাজ করা আমার পরম সৌভাগ্য । তুমি যখনই ডাকবে আমি তোমার ওখানে গিয়ে শ্যুটিং করে আসবো ।”

দাদার সেই ছবিটার নাম ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, ছবিটা পরে দাদাই পরিচালনা করেছিলেন । বেশিরভাগ শ্যুটিং করেছি কলকাতায়, রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই আমার হয়েছে । দাদা আর সুপ্রিয়া দেবী মানে বেণুদি সারাক্ষণ আমার ওপর বিশেষ নজর রেখেছেন । ওই ছবিতে দাদার কাছ থেকে যা শিখেছি তা ভাঙিয়ে আমার সারাজীবন চলে যাবে । অভিনয়ের সময় হাঁটা-চলা, ভাব-ভঙ্গিমা থেকে শুরু করে কথা না বলে কিভাবে শুধু চোখ আর মাংসপেশী নাড়িয়ে নির্বাক অভিনয়ের অভিব্যক্তি তুলে ধরতে হয় তা কিন্তু প্রথম দাদাই শেখালেন । অভিনয়ের সময় দাদা বলতেন “কখনই ক্যামেরায় ডাইরেক্ট লুক দিবি না । সোজা তাকালে সুইং করবে, ট্যারা দেখাবে । সবসময় অ্যাক্টিং করবি না, মাঝেমাঝে ক্যামেরার সামনে চুপ মেরে থাকবি, আন্ডার প্লে করবি । দেখবি তার এফেক্টটা হবে একেবারে আলাদা ।
আমার অভিনয়ের মহাগুরু উত্তমকুমার । তিনি নেই, কিন্তু তাঁর স্কুলিং রয়ে গেছে আজও ।
কথাগুলো মিঠৃন চক্রবর্তির। ১৬ জুন ডিসকো ড্যান্সার খ্যাত অভিনেতা মিঠূন চক্রবর্তির জন্মদিন।

শেয়ার করুন

Select Language

Magazine
সেমন্তি সৌমির এক ঝলক; সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্যাশনের ঢেউ | Samonty Shoumi কনিকার সেলিব্রেটেড ফ্যাশন | আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ | Model Konika ডিজে আভিলা | সৃজনশীলতার নতুন দিগন্তে এক উদীয়মান তারকা | DJ AVILA পিউ কাহার লাইফস্টাইল | ফ্যাশন, ফিটনেস এবং সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত | Model Peu Kaha লালবাগ কেল্লার রহস্যময় ইতিহাস বিদায় সাদা ফানুস | আয়োশী আক্তার মাহিয়া শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ Copa America Final 2024 | Argentina Vs Colombia Sonakshi Sinha And Zaheer Iqbal Fans Call Them Happy Couple মাউন্ট এভারেস্ট; পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের রহস্য ঐশ্বরিয়া রাই ও সালমান খান; সম্পর্কের রসায়ন ও বলিউডের বিতর্কিত অধ্যায় শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি | তারকার মতোই বিলাসবহুল জীবন সেলিব্রিটি স্পটলাইটে সেমন্তী সৌমি

LIVE SERIES

Home
Magazine
Live
Episode
Music
Search
Scroll to Top