মাউন্ট এভারেস্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত। এটি হিমালয়ের মাধ্যমে নেপাল ও তিব্বতের সীমান্ত করে। এই পর্বতটির উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট)। মাউন্ট এভারেস্টে প্রবাসী মহিলা ও পুরুষ পর্যটকদের জন্য একটি অপূর্ব গন্তব্য। পর্বত চুলের শৃঙ্গে পৌঁছতে এক মহান উপলক্ষ্য। তারা অনুভব করে একটি অদৃশ্য সৃষ্টির সম্মোহন। পার্বতিক অভিজ্ঞতা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা, যা শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অমিলতে জড়িত। মাউন্ট এভারেস্ট যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন, যা নেপাল ও চীন দুটি দেশের অধীনের দেয়া হয়। দ্রুততার সঙ্গে পর্বত যাত্রীরা এই অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে অনুরোধ করা হয়। মাউন্ট এভারেস্টের পাওয়ার পথ একটি পর্বতীয় নেপাল গাঁথাটি। এটি একটি পর্বত অভিজ্ঞ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে গল্প করে তাদের অদৃশ্য সৃষ্টির অভিজ্ঞতা দেয়।
মাউন্ট এভারেস্ট, পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়। ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট) উচ্চতার এই পর্বতশৃঙ্গটি নেপাল এবং চীন সীমান্তে অবস্থিত। স্থানীয় ভাষায় মাউন্ট এভারেস্টকে সাগরমাথা (নেপালি) এবং চোমোলুংমা (তিব্বতী) বলা হয়। এই শৃঙ্গটির নামকরণ করা হয়েছে জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে, যিনি ছিলেন ভারতের একজন প্রাক্তন সার্ভেয়ার জেনারেল।
ভৌগোলিক অবস্থান এবং নামকরণ
মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থান নেপাল এবং চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সীমানায়। এটি মহাবিশ্বের বৃহত্তম পর্বতমালা, হিমালয়ের মহা ধারার অংশ। তিব্বতীরা এটিকে চোমোলুংমা (Chomolungma) বলে, যার অর্থ “পৃথিবীর মা”। নেপালে এটি সাগরমাথা নামে পরিচিত, যার অর্থ “আকাশের মাথা”।
প্রথম সফল অভিযান
মাউন্ট এভারেস্টের প্রথম সফল অভিযান ছিল ১৯৫৩ সালে, যখন স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছান। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা অভিযাত্রীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই অভিযানটি প্রমাণ করেছে
ইতিহাস ও আবিষ্কার
১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ জরিপকারীরা প্রথমবারের মতো মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্ধারণ করেন এবং এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের নামকরণ হয় জর্জ এভারেস্টের নামে, যিনি ছিলেন ১৮৩০ থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল। তবে স্থানীয় জনগণের কাছে এই শৃঙ্গটি বহু পূর্ব থেকেই পরিচিত ছিল এবং এটির বিভিন্ন নাম ছিল যেমন সাগরমাথা ও চোমোলুংমা।
আরোহন এবং প্রথম বিজয়
মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে প্রথম মানব পদার্পণ হয় ১৯৫৩ সালের ২৯ মে। স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে ছিলেন প্রথম দুজন ব্যক্তি যারা সফলভাবে এই শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। তাদের এই অসাধারণ অভিযানের ফলে এভারেস্ট আরোহণের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
অভিযানের চ্যালেঞ্জ
মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অত্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়া, অক্সিজেনের স্বল্পতা, হিমবাহ ও তুষারধসের ঝুঁকি – এসবই অভিযাত্রীদের জন্য বড় বাধা। এছাড়া উচ্চতার রোগও (altitude sickness) একটি বড় সমস্যা, যা অনেক অভিযাত্রীর জীবন কেড়ে নিয়েছে। ৮,০০০ মিটারের ওপরে “ডেথ জোন” নামে পরিচিত অঞ্চলে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায় এবং সেখানে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়।
পর্বত আরোহনের মৌসুম
মাউন্ট এভারেস্ট আরোহনের প্রধান মৌসুম হলো বসন্ত (এপ্রিল-মে) এবং শরৎ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর)। এই সময় আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে, যা আরোহনকে কিছুটা সহজ করে তোলে। বসন্তকালে বরফ ও তুষার কম থাকে, যা আরোহণের পথ সুগম করে। শরৎকালে আবার বরফ ও তুষার কিছুটা বেড়ে যায়, কিন্তু আবহাওয়া তখনও সহনীয় থাকে।
এভারেস্টের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
মাউন্ট এভারেস্ট হিমালয় পর্বতমালার অংশ এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এভারেস্টের দুই প্রধান ঘাঁটি শিবির রয়েছে – দক্ষিণ বেস ক্যাম্প (নেপাল) এবং উত্তর বেস ক্যাম্প (তিব্বত)। দক্ষিণ বেস ক্যাম্পটি ৫,৩৬৪ মিটার উচ্চতায় এবং উত্তর বেস ক্যাম্পটি ৫,১৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখান থেকে আরোহীরা শৃঙ্গ জয়ের পথে যাত্রা শুরু করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
মাউন্ট এভারেস্টে আরোহনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এটির ফলে পরিবেশ দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত আরোহী এবং পর্যটকের কারণে শৃঙ্গের চারপাশে প্রচুর বর্জ্য জমে থাকে, যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। এছাড়া অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে।
নেপাল ও চীন উভয় দেশই বর্তমানে মাউন্ট এভারেস্টের পরিবেশ সুরক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নেপাল সরকার অভিযাত্রীদের বর্জ্য ফিরিয়ে আনার জন্য বাধ্যতামূলক নিয়ম প্রণয়ন করেছে এবং এর মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষার প্রচেষ্টা করছে। তিব্বতের উত্তর বেস ক্যাম্পেও কঠোর নিয়মাবলী আরোপ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল ও তিব্বতের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক উৎস। প্রতিবছর অসংখ্য অভিযাত্রী এবং পর্যটকরা এখানে আসেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। স্থানীয় শেরপা সম্প্রদায়, যারা অভিযাত্রীদের গাইড ও সহায়ক হিসেবে কাজ করেন, তাদের জন্যও এটি একটি প্রধান আয়ের উৎস। শেরপাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
মাউন্ট এভারেস্ট কেবল একটি পর্বতশৃঙ্গ নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকও। স্থানীয় জনগণের জন্য এটি পবিত্র এবং এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নেপালিদের কাছে সাগরমাথা এবং তিব্বতীদের কাছে চোমোলুংমা নামে পরিচিত এই শৃঙ্গটি তাদের জীবনের অংশ।
মাউন্ট এভারেস্ট, বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি মানবজাতির অদম্য সাহস, অধ্যবসায় এবং অভিযানের প্রতীক। এটির উচ্চতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অভিযানের চ্যালেঞ্জ মিলে এভারেস্টকে একটি অনন্য আকর্ষণে পরিণত করেছে। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে অভিযাত্রীরা এখানে আসেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে।