সালমান শাহ | Salman Shah
আসল নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার, বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী, মা : নীলা চৌধুরী, স্ত্রী : সামিরা, উচ্চতা : ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত, শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন। প্রথম নায়িকা : মৌসুমী, সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)। মোট ছবি : ২৭টি, বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা। ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা, একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী। মৃত্যু : শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬।
১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার- সন্ধ্যায় ‘প্রেমপিয়াসী’ ছবির ডাবিং করতে যান সালমান শাহ। সেখানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন নায়িকা শাবনূর। কিছুক্ষণ পর সালমান তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে বলেন, তাঁর স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসার জন্য। শ্বশুরের সঙ্গে সাউন্ড কমপ্লেক্সে এসে সামিরা দেখতে পান সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠভাবে খুনসুটি করছে। সালমান প্রায়ই এ ধরনের খুনসুটি করতেন। সামিরাকে উত্তেজিত করে তুলতেন। কিছুক্ষণ পর কমর উদ্দিন চলে গেলে সামিরাও দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। অবস্থা খারাপ দেখে একই গাড়িতে ওঠেন সালমান শাহ ও চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার। সালমানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন সামিরা। তাঁকে বোঝাতে থাকেন বাদল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালমান এফডিসির প্রধান ফটকের সামনে নেমে আড্ডা দেন, যা এর আগে কখনো করেননি।
রাত ১১টার দিকে নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বি-১১ নম্বর ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন বাদল খন্দকার। সামিরাও তখন ঘরে। সাড়ে ১১টার দিকে সালমান বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখেন। তখনো তাঁদের মধ্যে কথা বন্ধ। ১২টার দিকে সালমানের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি বাথরুমে গিয়ে কথা বলে বেরিয়ে টিভি বন্ধ করে অডিও ক্যাসেট ছাড়েন। এ সময় আরো একটি ফোন আসে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। উত্তেজিত হয়ে সালমান মোবাইল ফোনসেটটি ভেঙে ফেলেন। ক্ষুব্ধ সামিরা ব্যাগ গুছিয়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে ফুফুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সালমানের পিএ আবুল ইন্টারকমে দারোয়ানকে গেট না খুলতে নিষেধ করেন। সামিরা ফিরে এলে সালমান তাঁকে ফুফুর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
৬ সেপ্টেম্বর সকালে ‘তুমি শুধু তুমি’ ছবির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল সালমানের। বাজারে পাঠানো হয় তাঁর দেহরক্ষী দেলোয়ারকে। এ সময় বাবা কমর উদ্দিন তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে আসেন। কিন্তু সালমানের সাথে তাঁর দেখা হয়নি। এরপরের ঘটনাগুলি বিতর্কিত। সামিরার দাবী পৌনে ১২টায় আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সালমানের মৃত দেহে সামিরা ও বাড়ির কাজের লোক মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করেন। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পার্লার থেকে সামিরার বান্ধবী রুবি এসে শুশ্রূষায় অংশ নেন। হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম এসে সালমান শাহকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে সালমানের বাবা কমর উদ্দিনকে খবর দেন। খবর পেয়ে কমর উদ্দিন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী, ভাই শাহরান ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁরা গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য লিফট দিয়ে নামাতে যান। এ সময় লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ মিনিট দেরি হয়। পরে তাঁকে নামিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন।
পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, সামিরার সাথে বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং এ দু’জন মিলে সালমানকে হত্যা করেছে। সামিয়া পালটা অভিযোগ করেন । এছাড়া সামিরা পুরো ঘটনার জন্য সালমান-শাবনুরের প্রেমকেও দায়ী করে।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে প্রয়াত সালমান যে সকল খ্যাতিমান ও গুণী পরিচালকদের ছবিতে কাজ করেছিলেন তাদের নাম ও ছবির তালিকা – সোহানুর রহমান সোহান (কেয়ামত থেকে কেয়ামত), শিবলি সাদিক – (অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু ও মায়ের অধিকার), জহিরুল হক ( তুমি আমার ও সুজন সখী), গাজী মাজহারুল আনোয়ার (স্নেহ), শফি বিক্রম্পুরি ( দেনমোহর), দিলিপ সোম (মহামিলন), এম এম সরকার (চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসি), বাদল খন্দকার ( স্বপ্নের পৃথিবী), হাফিজউদ্দিন ( আঞ্জুমান), দেলোয়ার জাহান ঝনটু ( কন্যাদান) , মালেক আফসারি ( এই ঘর এই সংসার), এম এ খালেক ( স্বপ্নের পৃথিবী), জীবন রহমান (প্রেমযুদ্ধ), মোহাম্মদ হান্নান (বিক্ষোভ), মোহাম্মদ হোসেন (প্রিয়জন), মতিন রহমান (তোমাকে চাই) ,শাহ আলম কিরন ( বিচার হবে), জাকির হোসেন রাজু ( জীবন সংসার) তমিজ উদ্দিন রিজভী (আশা ভালোবাসা)।
যে সকল গুণী ও খ্যাতিমান পরিচালকদের সাথে কাজ করতে পারেননি বা করার সুযোগ হয়নি তাঁরা হলেন – কামাল আহমেদ, এ জে মিন্টু, দেওয়ান নজরুল, মোতালেব হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, রায়হান মুজিব, ফজল আহমেদ বেনজীর , কাজী হায়াত, শহিদুল ইসলাম খোকন, মোস্তফা আনোয়ার, চাষি নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আবুল খায়ের বুলবুল, অশোক ঘোষ, নাদিম মাহমুদ, সিদ্দিক জামাল নানটু, ইস্পাহানি আরিফ জাহান, নূর হোসেন বলাই, মমতাজুর রহমান আকবর, সৈয়দ হারুন, আওকাত হোসেন, মনোয়ার খোকন, উত্তম আকাশ, ওয়াকিল আহমেদ, বেলাল আহমেদ, এফ আই মানিক, আজিজুর রহমান বুলি, শেখ নজরুল ইসলাম, আলমগীর কুমকুম ।।যাদের ছবি করতে পারেনি উনাদের যদি একটি করে ছবি সালমান জীবিত অবস্থায় উপহার দিয়ে যেতে পারতো তাহলে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আরও কিছু কালজয়ী ছবি দর্শকরা পেতো। এই আফসোস রয়ে যাবে সালমান ভক্তদের চিরকাল।
সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা, ছবির নাম এবং ছবি মুক্তির তারিখ –
- কেয়ামত থেকে কেয়ামত – ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
- তুমি আমার – ১৯৯৪ সালের ২২ মে
- অন্তরে অন্তরে – ১৯৯৪ সালের ১০ জুন
- সুজন সখী – ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
- বিক্ষোভ – ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
- স্নেহ – ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
- প্রেমযুদ্ধ – ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর
- কন্যাদান – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
- দেনমোহর – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
- স্বপ্নের ঠিকানা – ১৯৯৫ সালের ১১ মে
- আঞ্জুমান – ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
- মহামিলন – ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
- আশা ভালোবাসা – ১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
- বিচার হবে- ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
- এই ঘর এই সংসার – ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
- প্রিয়জন – ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
- তোমাকে চাই – ১৯৯৬ সালের ২১ জুন
- স্বপ্নের পৃথিবী – ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
- সত্যের মৃত্যু নেই – ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর
- জীবন সংসার – ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
- মায়ের অধিকার – ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
- চাওয়া থেকে পাওয়া – ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
- প্রেম পিয়াসী – ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
- স্বপ্নের নায়ক – ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
- শুধু তুমি – ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
- আনন্দ অশ্রু – ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট
- বুকের ভেতর আগুন – ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।